শক্তি পাল্টানোর ফলে সিলেটে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা

শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পতনের পর সিলেটের স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে: দুটি ইসলামী সংগঠন — হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামী — এর মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে, যা নীরবে কিন্তু বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যদিও উভয় সংগঠনের মূলভিত্তি ধর্মীয় আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং ক্ষমতার গতিপথ ভিন্নভাবে বিকশিত হয়েছে। গত কয়েক বছরে, আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতের রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর চেষ্টা করছিল, তখন হেফাজতে ইসলাম কিছুটা নীরব সমর্থন লাভ করে। সেই সময়ে বহু জামায়াত নেতাকর্মী হয়রানি, কোণঠাসা কিংবা আটক হন, যার ফলে জামায়াতপন্থীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয়।

এখন জামায়াতে ইসলামী বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে আবারো প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং পরিস্থিতি উল্টে গেছে। যেসব ব্যক্তি আগে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে হেফাজতের সাথে যুক্ত ছিলেন, তারা এখন গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছেন, অনেককে "সাবেক সরকারের সহযোগী" বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

"জামায়াত সমর্থকরা ক্ষমা করতে প্রস্তুত নয়," বললেন এক স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। "তাদের বিশ্বাস, হেফাজত আওয়ামী লীগের হয়ে জামায়াতের প্রভাব দমন করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিল। এখন তারা সেই হিসাব মিটাতে চায়।"

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হেফাজতের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি — আলেম, ব্যবসায়ী, শিক্ষক এমনকি সমর্থকদের আত্মীয়স্বজন পর্যন্ত — গ্রেফতার, প্রতিশোধ বা আরও খারাপ কিছু থেকে রক্ষার জন্য গোপনে লুকিয়ে রয়েছেন। এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপগুলো আনুষ্ঠানিক নয়, বরং ব্যক্তিগত এবং স্থানীয়ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে হুমকি, নজরদারি বা মিথ্যা মামলার মতো ঘটনা।

"এটি এক অদ্ভুত" মন্তব্য করেন সিলেটভিত্তিক এক কমিউনিটি নেতা। "দুটি ইসলামপন্থী সংগঠন, যারা এক সময় আদর্শগত দিক থেকে কাছাকাছি ছিল, এখন একে অপরের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রতিহিংসার ভিত্তিতে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে, যা ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণে নয়।"

এই ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার একটি বিপজ্জনক দিককে উন্মোচিত করে, যেখানে কোনো দলীয় সংশ্লিষ্টতা — এমনকি অনুমানভিত্তিক হলেও — ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য জীবনঘাতী পরিণতি ডেকে আনতে পারে, নির্ভর করে কারা ক্ষমতায় আছে তার উপর।





Post a Comment

0 Comments